১৬ দফা নির্দেশিকা প্রকাশ করল রাজ্য। সমস্ত সরকারি প্রকল্পের টাকা পাওয়া আরও কঠিন হলো।

১৬ দফা নির্দেশিকা রাজ্যের অর্থ দপ্তরের

সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা উপভোক্তাদের একাউন্টে সরাসরি ঢুকে যায় DBT (Direct Bank Transfer) এর মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া যেমন সহজ সরল তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে রাজ্যের অর্থ দপ্তর (Finance Department) সরকারি প্রকল্পের টাকা দেওয়ার বিষয়ে ১৬ দফা নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকা রাজ্যের প্রতিটি সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এবার থেকে সরকারি প্রকল্পের টাকা পাওয়ার জন্য এই 16 টি নিয়ম মেনে চলতে হবে সাধারণ মানুষ এবং সরকারকে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Channel Join Now

ইতিমধ্যেই রাজ্য ঘটে গেছে ট্যাব কেলেঙ্কারি, যার ফলে উপভোক্তা টাকা চলে গেছে অন্য একাউন্টে। এই সকল দুর্নীতি রোধ করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে টাকা বিতরণ করার জন্যই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে বাংলা আবাস যোজনার টাকা দেওয়ার আগে, গ্রামে সভা করা হয়েছে এবং সেখানে ওটিপির মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টের সাথে উপভোগ তার লিংক যাচাই করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে সরকার সচেতন হয়েছে দুর্নীতি রোধ করতে।

লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে এই সকল মহিলাদের। কাদের কপাল পুড়বে জানুয়ারি মাসে?

১৬ দফা নির্দেশিকা গুলি কী কী?

১) ব্যাংকের শাখা রাজ্যের মধ্যে থাকতে হবে:
অনেক সময় দেখা যায় উপভোক্তার ব্যাংক একাউন্টের শাখা রাজ্য তথা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকে। এই নিয়ম আর থাকবে না। উপভোক্তা যিনি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের শাখা থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গের ভেতরে। এর ফলে টাকা পাঠানোর সময় কোন বিভ্রান্তি ঘটবে না।

২) অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া:
নতুন নির্দেশিকায় অর্থ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে অফলাইনে আবেদন করা যাবে না, কারণ অফলাইন আবেদন করার পর সেই নথিপত্র দেখে অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করার সময় অনেক ভুল চোখে পড়ে। এই সমস্ত ঝামেলা এড়ানোর জন্য এবার থেকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে সকলকে। ফিজিক্যাল ডকুমেন্টেশনের সমস্যা দূর হবে, পরিছন্নতা বজায় থাকবে।

সিনিয়র সিটিজেন কার্ডে অজস্র সুবিধা। ট্রেন, বাসের টিকিট সহ সুদের হার সবেতেই আকর্ষণীয় ছাড়।

৩) নাম ও ঠিকানা সংশোধন:
উপভোক্তার নাম এবং ঠিকানা সম্পর্কিত নানান সমস্যা দেখা যায় যেমন-বানান ভুল। এই কারণে অনলাইনে আবেদনের সময় নাম ঠিকানা এবং ব্যাংকের তথ্য দুটো আলাদা সময়ে এন্ট্রি করতে হবে। ব্যাংকের সমস্ত তথ্য এবং ঠিকানায় কোন ভুল থাকলে তা সঠিক করা যাবে ফলে টাকা পাঠানোর সময় অ্যাকাউন্টে পৌঁছাতে দেরি হবে না।

৪) ব্যাংক একাউন্ট যাচাই:
কোন উপভোক্তা যখন সরকারি সাহায্য পান তখন তার ব্যাংক একাউন্টটি NPCI বা ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা যাচাই করা হয়। এই যাচাই প্রক্রিয়া আরো কঠোরভাবে করতে হবে যাতে উপভোক্তার ব্যাংক একাউন্ট সঠিক কিনা সেটা বোঝা যায়।

৫) সেভিংস অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন:
যে ব্যক্তি কোন সরকারি প্রকল্পের জন্য আবেদন করছেন তার নিজস্ব নামে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। ১৬ দফা নির্দেশিকায় পরিষ্কার জানানো হয়েছে, প্রতিটি আবেদনকারীর নিজস্ব নামে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক।

বাংলা আবাস যোজনার ফাইনাল লিস্ট দেওয়া হল। মোবাইলে মেসেজ না এলে কী করবেন?

৬) এলার্ট সিস্টেম চালু:
এই প্রথম সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে এসএমএস এলার্ট সিস্টেম চালু করা হবে। অনলাইনে কোন প্রকল্পের স্ট্যাটাস চেক যেভাবে করা যায় সেই ঝামেলা কমিয়ে আনতে এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে এবার থেকে আবেদনকারীর আবেদনের অবস্থান জানাতে এসএমএস পাঠাবে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে টাকা বরাদ্দ হয়েছে কিনা, কি সমস্যা রয়েছে, টাকা কবে একাউন্টে ঢুকবে এই সমস্ত বিষয়ে অ্যালার্ট করা যাবে উপভোক্তাকে।

৭) ব্যাংক একাউন্টের সাথে নামের মিল থাকতে হবে:
অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় উপভোক্তা নামের সাথে ব্যাংক একাউন্টের নামের সঠিক মিল নেই হয়তো পদবী আলাদা, বা বানান অন্যরকম। এধরনের ঘটনাতে সতর্ক থাকার জন্য আবেদনকারীর একাউন্টের সাথে তার নাম সঠিকভাবে মিলিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাংকে গিয়ে সেটি সঠিক করে নিতে হবে।

৮) প্রতিলিপি বা ক্যান্সেল চেক নিতে হবে:
উপভোক্তার একাউন্টে টাকা পাঠানোর আগে তার সেভিংস একাউন্টের পাস বইয়ের প্রথম পাতার জেরক্স বা ক্যান্সেল চেক জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে উপভোক্তার নাম, অ্যাকাউন্ট নাম্বার দুবার করে যাচাই করতে হবে।

৯) আইএফএসসি যাচাই প্রক্রিয়া:
সেভিংস একাউন্টের আইএফএসসি কোডটি রিজার্ভ ব্যাংকের তালিকা অনুযায়ী মিলিয়ে দেখতে হবে। এর ফলে অ্যাকাউন্ট সঠিক কিনা বোঝা যাবে।

কেন্দ্রের নতুন প্রকল্প : মহিলারা প্রতি মাসে পাবেন ৭,০০০ টাকা। কারা যোগ্য?

১০) অফিসারদের অনুমোদন দিতে হবে:
টাকা ছাড়ার পর ব্যাংকের গ্রুপ এ পদের অফিসারদেরকে অনুমোদন দিতে হবে। অর্থাৎ অফিসার ছাড়া অন্য পদে কোন আধিকারিক টাকার বিষয়ে অনুমোদন দিতে পারবেন না।

১১) পোর্টাল একই থাকতে হবে:
টাকা পাঠানোর সময় টাকা পাঠানোর পোর্টাল এবং বিভাগীয় পোর্টালের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।

১২) একটি ব্যাংক একাধিক উপভোক্তা:
১৬ দফা নির্দেশিকায় পরিষ্কার বলা হয়েছে একটি ব্যাংক একাউন্ট যেনো একজন ব্যক্তি ব্যবহার করে, অর্থাৎ একটি ব্যাংক একাউন্টে একের বেশি মানুষের প্রকল্পের টাকা দেওয়া হবে না।

১৩) প্রকল্পের বিষয়ে সতর্ক:
অর্থ দপ্তরকে সতর্ক হতে হবে কোন ব্যক্তি কোন প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন। ফলে এক প্রকল্পের টাকা অন্য ব্যক্তির একাউন্টে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটবে না।

দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের দরকার নেই। সব প্রকল্পের জন্য আবেদন করুন এইখানে।

১৪) অটো ক্যানসেল প্রক্রিয়া:
অনেক সময় টাকা পাঠাতে গেলে টাকা আটকে যায় পরে সেটি অটোমেটিক ক্যানসেল হয়ে যায়। এরকম ঘটনা ঘটলে নতুন করে আবার টাকা পাঠাতে হবে উপভোক্তার একাউন্টে।

১৫) ত্রিমাসিক স্টেটমেন্ট:                                                           যে প্রকল্পের জন্য যে দপ্তর টাকা পাঠায় তাদেরকে মাসিক অথবা ত্রিমাসিক অর্থাৎ তিন মাস অন্তর একবার পর্যালোচনা জন্য স্টেটমেন্ট পাঠাতে হবে অর্থ দপ্তরের কাছে।

১৬) অফলাইন আবেদনের সর্তকতা:
যে প্রকল্প গুলিতে অফলাইন আবেদন করা হবে সেগুলিতে এমনভাবে নথিপত্র পেশ করতে হবে উপভোক্তাকে, যাতে সেগুলি যাচাই করতে আধিকারিকদের কোনো রকম সমস্যা না হয়। সমস্যা হলে সেই যাচাই প্রক্রিয়া সেখানেই আটকে যাবে।

যে কোনো সরকারি প্রকল্পের টাকা পাঠানোর বিষয়ে ১৬ দফা নির্দেশিকা প্রকাশ করে এই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফে। ভবিষ্যতে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের মত দুর্নীতি যাতে আর না ঘটতে পারে সেদিকে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।

Md Cyber Zone -এর কনটেন্ট রাইটার। একজন বিশিষ্ট ইউটিউবার। বিগত চার বছরের বেশি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত।

Share this content:
WhatsApp Group Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a Comment