দুয়ারে সরকার ক্যাম্প 2024
২০২৪ সালে যেহেতু একবারও দুয়ারে সরকার ক্যাম্প হয়নি, তাই সাধারণ মানুষ বেশ চিন্তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। চিন্তার কোন কারণ নেই, আজকের প্রতিবেদনটি পড়লে বুঝতে পারবেন যে, আসলে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের প্রয়োজন নেই। এই ক্যাম্প ছাড়াও নির্দ্বিধায় সমস্ত সরকারি প্রকল্পের আবেদন এবং সব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন আপনি।
দুয়ারে সরকার ক্যাম্প কবে চালু হয়?
২০২০ সালের ১লা ডিসেম্বর করোনা পরিস্থিতির চাপে পড়ে সরকারের তরফ থেকে একটি নতুন পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য প্রতিটি জেলার ব্লকে বা ভোটবুথে এই ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। যেখানে গিয়ে সাধারন মানুষ নানান রকম সরকারি প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারছিলেন এবং সেই সমস্ত প্রকল্পের বিষয়ে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো সমাধান করতে পারছিলেন।
নিয়ম রক্ষা হচ্ছে না!
এই ক্যাম্প ছমাস অন্তর বছর দুবার করে বসার কথা ছিল। প্রথমদিকে নিয়ম রক্ষা হচ্ছিল। কিন্তু গত ২০২৩ সালে বছরে একবার এই ক্যাম্প হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে এখনো পর্যন্ত এই ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়নি। আর হবে বলেও মনে হচ্ছে না। কারণ ইতিমধ্যে সরকারের তরফ থেকে একটি নতুন ক্যাম্প ২ ডিসেম্বর থেকে চালু করা হয়েছে। এই বিষয়েও আমরা এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানব। চলতি ডিসেম্বর মাসে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প বসার কথা ছিল কিন্তু তারিখটা পিছিয়ে হয়তো ২০২৫ হয়ে যেতে পারে।
Bangla Awas Yojana List : জেলা অনুযায়ী আবাস যোজনা লিস্ট চেক করুন। আপনার নাম লিস্টে আছে নাকি দেখুন।
দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের প্রয়োজনীয়তা আসলে কতটুকু?
সাধারণ মানুষকে আগে বিভিন্ন অফিসে ছোটাছুটি করতে হতো, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। কিন্তু এই ক্যাম্পে প্রতিটা প্রকল্পের আলাদা সেল করা হয়। সেখানে ভিড় হয় না, বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী মানুষেরা খুব সহজে নিজের এলাকাতেই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সাধারণ মানুষের জন্য এ ক্যাম্প খুবই প্রয়োজন। আপনার এলাকায় কবে ক্যাম্প বসবে এটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানতে পারবেন। দুয়ারে সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটি হলো – এখানে ক্লিক করুন।
এই ক্যাম্প না হলে কী করবেন?
সরকার যতক্ষণ না উদ্যোগ নিয়ে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প করছে ততক্ষণ চুপ করে বসে থাকার দরকার নেই। আসুন বিস্তারিত জেনে নিই এই ক্যাম্প ছাড়াও কোথায় কোথায় আপনি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ফর্ম জমা দিতে পারবেন এবং টাকা একাউন্টে পেতে পারবেন।
বিশ্বকর্মা যোজনায় নগদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। পরে লোন পাবেন ৩ লক্ষ টাকার।
১) লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প – পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বাড়ির ২৫ বছর ঊর্ধ্ব মহিলাদের প্রতি মাসে ১০০০(সাধারণ শ্রেণী), ১২০০(তপশিলি জাতি, উপজাতি) টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। ক্যাম্প ছাড়াও পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষেত্রে বিডিও অফিস, পৌরসভা এলাকার ক্ষেত্রে মিউনিসিপ্যালিটি অফিসে এই প্রকল্পের জন্য নতুন করে আবেদন বা তথ্য সংশোধনের কাজ করতে পারবেন।
কী কী ডকুমেন্ট নিয়ে যাবেন?
•আধার কার্ড।
•স্বাস্থ্য সাথী কার্ড (এক্ষেত্রে বলে রাখা জরুরী আবেদনকারীর যদি নিজস্ব নামে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নাও থাকে তাহলেও তিনি আবেদন করতে পারবেন, শুধুমাত্র যেকোনো পরিবারের সদস্যের স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে তার নামটা অন্তর্ভুক্ত থাকলেই হবে)।
•এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ফটো।
•আবেদনকারী নিজস্ব নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে এবং সেই ব্যাংক একাউন্টের প্রথম পাতার জেরক্স জমা দিতে হবে।
•তপশিলি জাতি বা উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হলে কাস্ট সার্টিফিকেট সাথে নিয়ে যেতে হবে।
•লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের ফর্ম তুলে সেটি পূরণ করতে হবে। আবেদন করার পরে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন – অফিসিয়াল ওয়েবসাইটি হলো – এখানে ক্লিক করুন।
Pan Card Update : কাদের প্যান কার্ড আপডেট করতে হবে? খরচ কত টাকা? কি কি নতুন সুবিধা পাওয়া যাবে?
২) বার্ধক্য ভাতা প্রকল্প/জয় জোহার – সাধারণ শ্রেণীর বৃদ্ধ বৃদ্ধারা প্রতিমাসে ১০০০ টাকা ভাতা পান, তপশিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত বৃদ্ধদের ভাতাটিকে জয় জোহর বলা হয়, এক্ষেত্রেও ১০০০ টাকা সাহায্য পাওয়া যায়। পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষেত্রে বিডিও অফিস, পৌরসভা এলাকার ক্ষেত্রে পৌরসভা অফিসে, বা সমাজ কল্যাণ দপ্তরে এই ভাতার আবেদন করা যায়।
কী কী ডকুমেন্ট লাগবে?
•আধার কার্ড
•ভোটার কার্ড
•এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ফটো
•ব্যাংক একাউন্টের প্রথম পাতার জেরক্স (এক্ষেত্রে বলে রাখা জরুরী বার্ধক্য ভাতার ক্ষেত্রে জয়েন্ট একাউন্ট থাকলে হবে না। আবেদনকারীর নিজস্ব নামে একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে)
•ইনকাম সার্টিফিকেট
•বার্ধক্য ভাতার ফর্ম তুলে সেটি পূরণ করতে হবে। এই ভাতাগুলির স্ট্যাটাস অনলাইনে কোথাও চেক করার ব্যবস্থা নেই।
লক্ষীর ভান্ডার, বিধবা ভাতা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা বাড়ানো হলো। ডিসেম্বরে কবে ঢুকবে?
৩) বিধবা ভাতা/প্রতিবন্ধী ভাতা -স্বামী হারা বিধবাদেরকে প্রতিমাসে ১০০০ টাকা সাহায্য দেওয়া হয়। যারা প্রতিবন্ধী তাদেরকেও প্রতিমাসে ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষেত্রে বিডিও অফিস, পৌরসভা এলাকার ক্ষেত্রে পৌরসভা অফিসে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করা যাবে। অন্যান্য প্রকল্পের মত এসব ডকুমেন্ট লাগবে কিন্তু বিধবাদের জন্য আলাদা করে লাগবে স্বামীর ডেথ সার্টিফিকেট এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট লাগবে। এই ভাতাগুলির স্ট্যাটাস অনলাইনে কোথাও চেক করার ব্যবস্থা নেই।
৪) কৃষকবন্ধু প্রকল্প – পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদেরকে প্রতিবছর ৬,০০০ টাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। অন্যান্য প্রকল্পের মতনই সমস্ত ডকুমেন্ট নিয়ে তার সাথে জমির পর্চা যুক্ত করে পঞ্চায়েতের বিডিও অফিসে বা কৃষিদপ্তর অফিসে আবেদন করতে হবে।
আরো অনেক সরকারি প্রকল্প রয়েছে সেই সমস্ত প্রকল্পের আবেদন এই উক্ত অফিসগুলোতেই হয়ে থাকে। প্রকল্প গুলি হল –
৫) খাদ্যসাথী প্রকল্প – রেশন কার্ডের মাধ্যমে আমরা যে খাদ্য সামগ্রী পেয়ে থাকি সেই প্রকল্প এটি। খাদ্যদপ্তরে আবেদন করা যাবে।
৬) স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প – পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাওয়ার জন্য এই প্রকল্প।
৭) কন্যাশ্রী প্রকল্প – ১৮ বছর অব্দি মেয়েদেরকে প্রতি মাসে কিছু অর্থ সাহায্য এবং ১৮ বছর পূর্ণ হলে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। স্কুল থেকেই প্রকল্পে আবেদন করা যায়।
৮) শিক্ষাশ্রী প্রকল্প
৯) তপশিলি বন্ধু প্রকল্প
১০) মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ড
১১) স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড
১২) প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট
১৩) সামাজিক সুরক্ষা যোজনা
১৪) কিষাণ ক্রেডিট কার্ড সহ সমস্ত সরকারি প্রকল্পের কাজ দুয়ারে সরকার ক্যাম্প ছাড়াও খুব সহজেই করা যায়।
ডিসেম্বর মাসে তাহলে কীসের ক্যাম্প শুরু হয়েছে?
২ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি ক্যাম্প করা হচ্ছে। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের আদলে এই ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে। ক্যাম্পটির নাম হল – ‘শিল্পের সমাধানে’। এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি হলো – এখানে ক্লিক করুন।
এই ক্যাম্পের উদ্দেশ্য কী?
এই ক্যাম্প (MSME & TEXTILE DEPARTMENT দ্বারা পরিচালিত) পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ হস্তশিল্পী কারিগরদের এবং বস্ত্র কারিগরদের, এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পের শিল্পীদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করার জন্য শুরু করা হয়েছে। এই ক্যাম্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল ক্ষুদ্র, মাঝারি, বস্ত্র দফতরের বিভিন্ন শিল্পীদেরকে তাদের কাজে আগ্রহ জাগানো, তাদেরকে আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে সহায়তা করা, পেশাগত উন্নয়ন সাধন করা, সাথে পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থানকে বৃদ্ধি করা।
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা ডিসেম্বর মাসে ঢুকবে না এই ভুল করলে। সব ঠিক আছে নাকি দেখে নিন।
এই ক্যাম্পের অনুমোদন :
রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ, ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের সচিব রাজেশ পান্ডে একটি বৈঠকের মাধ্যমে এই শিল্পের সমাধানে ক্যাম্পের দিনক্ষণ ঠিক করেছেন এবং এই ডিসেম্বর মাসটিকে ‘ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্পোদ্যোগের মাস’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শিল্পের সমাধানে ক্যাম্পে কী সুবিধা পাওয়া যাবে?
১) বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পীরা বা হস্তশিল্পীরা এই ক্যাম্পে নানান সরকারি সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২) তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা পাবেন, কাজ করার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ বিষয়ে সাহায্য করা হবে।
৩) ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৪) চলমান প্রকল্পের যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
৫) মৃত্যুকালীন সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২০২৩ সালে এই MSME ক্যাম্প হওয়ার পরেই দুয়ারে সরকার ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাই এবারও মনে করা হচ্ছে এই ক্যাম্প শেষ হয়ে গেলে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প শুরু হবে। কিন্তু তা ২০২৫ সালে হবে বলেই মনে হচ্ছে।